ইসতিয়াক আহমেদ , কুমিল্লা
কুমিল্লার দাউদকান্দির কালাডুমুর নদী এখন ময়লা আবজর্নার স্তুপে প্রায়ই বিলীনের পথে। প্রতিদিনই স্থানীয়রা ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলছে। ফলে নদীর পানি দূষণের পাশাপাশি নদীটি ভরাট হয়ে বিলীন হওয়ার পথে।
জানা যায়, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজার সংলগ্ন গোমতী নদী থেকে কালাডুমুর নদের উৎপত্তি। ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কালাডুমুর নদীতে একসময় বর্ষায় মালবোঝাই নৌকা, ইঞ্জিন চালিত বড় বোট এবং কার্গো চলাচল করত। সবধরনের মালামাল নৌপথে পরিবহন করত। কালের ব্যবধানে সে সব দিন এখন হারিয়ে গেছে।




যে নদী থেকে দাউদকান্দি, মুরাদনগর, চান্দিনা এবং কচুয়া উপজেলার প্রায় পঞ্চাশ হাজার বিঘা জমি চাষের পানি ব্যবহার করা হতো সেটি এখন ময়লা আবর্জনার স্তুপে পরিণত হতে যাচ্ছে।বোরোধান আবাদের সময় কৃষকরা মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের ক্ষোভ বাড়ছে। গঠন হয়েছে কালাডুমুর নদীটির সুরক্ষা আন্দোলন কমিটি ।
সরেজমিনে যেয়ে কালাডুমুর নদীর আশেপাশের গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কালাডুমুর নদীর পানি দিয়ে তারা বোরোধান উৎপাদন করে সারা বছরের খাদ্যের ব্যবস্থা করে থাকে এবং তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। কালাডুমুর নদী তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহের অনত্যম উৎস।
তারা আরো বলেন, কালাডুমুর নদীর পানি শুকিয়ে গেলে আমাদের চোখে অন্ধকার নেমে আসে কারণ কালাডুমুর নদী আমাদের সবার জীবনের অস্তিত্ব।আমরা এর পূনঃখনন এবং দখল দূষণ ময়লা আবর্জনা মুক্ত রাখার জন্য দাবী জানাচ্ছি।


মতিন সৈকত বলেন, কালাডুমুর নদী পূনঃখননের জন্য ১৯৯০ সাল থেকে ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছি। বিশ বার সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, কোদাল মিছিল, প্রতিকী অনশন, নদী মেলা, নদী অলম্পিয়াড করে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করেছি। ফলে কালাডুমুর নদের ১১ কিলোমিটার পূনঃখনন শুরু হয়েছে। আগামী বছর বাকি অংশ পূনঃখননের কথা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, একদিকে আমরা কালাডুমুর নদী পূনঃখনন করাচ্ছি অন্যদিকে কালাডুমুর নদীকে দখলে দূষণে ময়লা আবর্জনার ভাগাড় বানিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে কালাডুমুর নদীর সুরক্ষার জন্য আন্দোলন করছি।
স্থানীয় ইলিয়ট গঞ্জ দক্ষিন ইউপি চেয়ারম্যান মামুন অর রশিদ বলেন, এ নদীটিতে বিভিন্ন ব্যাক্তি অবৈধভাবে স্থায়ী ইমারত নির্মান করছে। অনেকে ময়লা আর্বজনা ফেলে, বাঁধ দিয়ে দখলের চেষ্ঠা করছে। এ বিষয়টি আমি উপজেলা নিবার্হী কর্মকার্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। অচিরেই নদীটি খনন না করা হলে তা দখল হয়ে যাবে।
দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম খান বলেন, এ নদীটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন। এই নদী খননের জন্য কয়েকবার বলা হয়েছে। নদী খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। তবে এ নদীটি দখলের কোন সংবাদ পেলে আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, কালাডুমুর নদীটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, গত বর্ষার পূর্বে এ নদীটি খনন কাজ শুরু হয়েছিলো। প্রায় দেড় কিলোমিটার খনন করা হয়েছে।এখন আপাতত বর্ষার কারনে খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্ষার পানি কমার পরে পর্যায়ক্রমে এটির খনন কাজ পুনরায় শুরু হবে।