কুমিল্লাবৃহস্পতিবার, ১৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জোরপূর্বক বিষপান ও এসিড ঢেলে প্রতিশোধ, ১২ দিন আইসিইউতে থাকার পর মারা যায় হোসেইনের

প্রতিবেদক
Palash Khandakar
জুন ১৮, ২০২৫ ৩:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার:

কুমিল্লা বুড়িচংয়ে ভয়ংকর প্রতিশোধের বলি হলো এক নিষ্পাপ শিশু। মাত্র ১৪ বছরের কিশোর হোসেইন, অপরাধ শুধু তার বাবা একটি গ্রাম্য সালিশে বিচারক ছিলো। আর সেই বিচারেই অপরাধী প্রমাণিত হয়েছিল সাইমুন। দুই মাস আগের একটি চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই বিবাদের অবসান ঘটলো ১২ দিন আইসিইউতে থাকা এক নারকীয় নির্মমতায় শিশু হোসেইনের মৃত্যুতে। ১৪ বছরের নিষ্পাপ ছেলে হোসেইনকে হারিয়ে কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা মা। স্বজনদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ।

নিহত হোসেন কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের আবু তাহেরের ছেলে। সে শিকারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। হোসাইনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা সদর হাসপাতালের মেডিসিন কনসাল্টেন্ট (আইসিইউ) অরূপ কুমার রায়।

৩১ই মে স্কুলছুট বিকেলবেলা। রাস্তা থেকে ডেকে নেয়া হয় বিচারক আবু তাহেরের ছেলে হোসেইনকে। তাকে বেঁধে বিষপান করানো হয়, তারপর অমানবিকভাবে তার অন্ডকোষে ঢেলে দেওয়া হয় এসিড। দুইমাস আগে কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের মইনুল হোসেনের মুদি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এই চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত সাইমুনের জড়িত থাকার ঘটনা প্রমাণিত হলে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে সাইমুনকে একই এলাকার সালিশের প্রধান বিচারক আবু তাহের ৫ হাজার জরিমানা করে। এতে ক্ষুব্ধ হয় সাইমুন ও তার ভাই আলাউদ্দিন। বাবার উপর ক্ষোভ মিটালো নিষ্পাপ ছেলের জীবনের মাধ্যমে।

নিহত হোসেনের বাবা আবু তাহের বলেন, ২ মাস আগে শিকারপুর এলাকার মইনুল হোসেনের মুদি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এই চুরির ঘটনায় একই এলাকার অটোরিকশা চালক সোলাইমানের ছেলে সাইমুনকে অভিযুক্ত করে মইনুল। পরে গ্রাম্য সালিশে আমি বিচারক হিসেবে থাকি। সেখানে সাইমুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হয় এবং সাইমুনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই বিচারের জের ধরে সোলাইমানের দুই ছেলে সাইমন ও আলাউদ্দিন আমার ১৪ বছর বয়সী ছেলে হোসেইনকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের বাড়িতে। হোসেইনের হাত পা বেধে বেধড়ক মারধর করে। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক বিষপান করিয়ে তার অণ্ডকোষে এসিড ঢেলে দেয়। পরে আমরা হোসেইনকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেইখানে ৫ দিন ছিল। তারপর দুইদিন ছিল একটা বেসরকারি হাসপাতালে। হোসেইনের অবস্থায় আরো খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে তাকে আবার সদর হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে আসি।

হোসেইনের মা শাহেনা বেগম বলেন, আমার ছেলে ১২ দিন ধরে আইসিইউতে থেকে জীবন মরণের সাথে লড়াই করে আজকে মারা গেছে। চুরির বিচার করতে গিয়ে আজ আমি আমার নিষ্পাপ ছেলেকে হারিয়েছি। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীর বিচার চাই।

কুমিল্লা সদর হাসপাতালের মেডিসিন কনসাল্টেন্ট (আইসিইউ) অরূপ কুমার রায় বলেন, তাকে আশংকাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। বিষক্রিয়ায় তার গলা ফুলে গিয়েছিল, শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। অন্ডকোষ ঝলসে গিয়েছিল।

এই বিষয়ে কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে দুইজনের নাম উল্লেখ করে কুমিল্লা বুড়িচং থানায় মামলা দায়ের করেছেন। জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।