কুমিল্লাবুধবার, ৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘১০ বছর পর মায়ের মুখ দেখলেন কোটিপতি ছেলে’

প্রতিবেদক
Palash Khandakar
জুলাই ১৩, ২০২৩ ৪:৫০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ডেস্ক রিপোর্ট:

কয়েকটি গণমাধ্যমে ‘দশ বছর ধরে মায়ের খোঁজ রাখেন না ছেলে’ এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় ও পাবনার চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ মহলের হস্তক্ষেপে মায়ের সঙ্গে দেখা করেন ছেলে আব্দুল মোতালেব।

অভিমান ভুলে দীর্ঘ দশ বছর পর শতবর্ষী মা আমেনা বেগমের সঙ্গে দেখা করার সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পাবনার চাটমোহরে পলিথিনে ঘেরা নাতনী রমেছার ভাঙা ছাউনিতে থাকেন মা আমেনা বেগম। কোটিপতি ছেলে মোতালেন থাকেন নাটোরের গুরুদাসপুরে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় গত সোমবার (১০ জুলাই) দুপুরে আব্দুল মোতালেবকে তার অফিসে ডাকেন এবং চাটমোহর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ মহল তাকে ফোনে ধর্মীয় ও আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে তার মায়ের প্রতি যত্নশীল হওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। সেই সঙ্গে তাকে সতর্ক করে দেন।

তার ফলশ্রুতিতে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরুকে নিয়ে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করেন ছেলে মোতালেব। ছেলে মাকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত অনেকের চোখে গড়িয়ে পড়ে আনন্দ অশ্রু। মায়ের ভরণপোষণের প্রতিশ্রুতি দেন ছেলে মোতালেব।

স্থানীয়রা জানায়, আমেনা বেগমের বয়স ১১০ বছর। শতবর্ষী ওই বৃদ্ধার এক সময় ছিল সুখের সংসার। এক কন্যা সন্তান জন্মের পরই আমেনা বেগমের কোলজুড়ে আসে ছেলে সন্তান। ছেলের নাম রেখেছিলেন আব্দুল মোতালেব। মেয়ে মারা গেলে নাতনিকে কোলে পিঠে মানুষ করেন নানা-নানি। হতদরিদ্র নাতনিকে ১০ শতক জায়গা লিখে দেওয়ার অজুহাতে প্রায় ১০ বছর পূর্বে বাবা-মাকে ফেলে ছেলে মোতালেব পাড়ি জমান নাটোরের গুরুদাসপুরে শ্বশুরবাড়িতে।

তবে নানি আমেনা বেগমকে ফেলতে পারেননি হতদরিদ্র নাতনি রমেছা খাতুন (৩৫)। নাতনির সংসার চলে না। শতবর্ষী আমেনা বেগমের দিনরাত কাটে ঘরের বাইরের পলিথিনে ঘেরা একটি ছাউনিতে। সেখানেই অতিকষ্টে চলছে তার জীবন। তাতেও ওই মায়ের কোনো কষ্ট নেই। কষ্ট একটাই সেটা হলো তার ছেলেকে এক নজর দেখার। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই বৃদ্ধার করুণ কাহিনী মানুষকে কাঁদালেও মন গলে না ছেলে আব্দুল মোতালেবের।

জানা যায়, চাটমোহর উপজেলার চর এনায়েতপুর গ্রামের আমেনা বেগমের একমাত্র ছেলে পার্শ্ববর্তী গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাচকৈড় বাজারে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বিশাল অট্টালিকায় বসবাস করেন। পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী। আব্দুল মোতালেব দীর্ঘ ১০ বছরেরও অধিক সময় তার মায়ের কোনো খোঁজ রাখেননি। এমনকি মায়ের মুখ পর্যন্ত দেখেননি।

বিষয়টি এলাকাবাসী ভালোভাবে নিতে পারেননি। ছেলে মোতালেবের এমন কর্মকাণ্ডের বিচার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট দেওয়া হয়। ফেসবুকের সেই পোস্টগুলো মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। চারিদিকে বইতে থাকে নিন্দার ঝড়।

ওষুধের ব্যবসা করে এখন মোতালেব বিপুল সম্পদের মালিক। এর মধ্যে প্রায় ১০ বছর আগে মারা যান আমেনা বেগমের স্বামী ওসমান মোল্লা। বাবার জানাজা শেষ করে মাকে ফেলে রেখে নিজ আবাসস্থলে চলে যান আব্দুল মোতালেব। সেই যাওয়াই শেষ যাওয়া! একা হয়ে পড়েন আমেনা বেগম।

এ ব্যাপারে আব্দুল মোতালেব জানান, আমার অন্যায় হয়েছে। এখন থেকে মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমি বহন করব। আশা করি মা আমাকে ক্ষমা করবেন। সেই সঙ্গে ভাগনি রমেছাকেও ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানাই এতদিন ধরে কষ্ট করে আমার মাকে দেখে রাখার জন্য।

এ ব্যাপারে রমেছার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি যতদিন বেঁচে আছি নানির পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ। নানা আমার নামে ১০ শতক জমি লিখে দিয়েছিলেন কিন্তু সেই জমি তো আমার মামা (মোতালেব) দখল দেননি। কিন্তু তাই বলে, মায়ের মুখ দেখতে আসবে না? অবশেষে মামা এসেছে তাতে তিনিও খুব খুশি। নানার দেওয়া ১০ শতক জমি মামাকে ফেরত দিতে চান তিনি।

চাটমোহর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ মহল জানান, তার মাকে ভরণপোষণের জন্য বলা হয়েছে। তার কাছে রেখে অথবা অন্য কারও মাধ্যমে হলেও মাকে দেখভাল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।