টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গত ৩১ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হলেও মঙ্গলবার বিষয়টি গণমাধ্যমের সামনে আসে।
টাঙ্গাইলের আদালত পুলিশের পরিদর্শক তানভীর আহমেদ জানান, আগামী ১০ অগাস্ট মামলাটির তারিখ ধার্য করা হয়েছে। ওইদিন অভিযোগপত্রটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বিচারিক আদালতে বদলি করা হবে।
এই মামলার দুই আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কিশোর আদালতে বিচারের জন্য দোষীপত্র দেওয়া হয়েছে বলেও জানায় তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল জেলা (দক্ষিণ) গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. হেলাল উদ্দিন জানায়, ডাকাতি ও দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে তারা হচ্ছেন- টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা গোরস্থান পাড়ার রাজা মিয়া (৩২), কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ধনারচর পশ্চিম পাড়ার নুরুননবী হোসেন (২৪), খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আব্দুল মান্নান (২০), মধুপুরের ধলপুর গ্রামের মাহমুদুল হাসান ওরফে মুন্না ওরফে রতন (২২), গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ছোট কাঞ্চনপুর গ্রামের আব্দুল আউয়াল (৩১), সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার দশসিকা গ্রামের রাসেল তালুকদার (৩০) ও একই গ্রামের আসলাম তালুকদার (১৯), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কাইতলা গ্রামের মো. আলাউদ্দিন (২৪), ঢাকার সাভার উপজেলার গোহাইল বাড়ি দক্ষিণ পাড়ার জুলহাস বাবু (২৭)। অন্য দুজন কিশোর।
২০২১ সালের ৩ অগাস্ট কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বাসটি মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। সেদিনই বাসের যাত্রী হেকমত আলী বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
মামলার আসামি প্রত্যেকেই ঘটনার পরপরই গ্রেপ্তার হন। দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন তারা। আসামিরা সবাই এখন টাঙ্গাইল কারাগারে বন্দি।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির তিনটি ধারায় ডাকাতি, লুটপাট ও ডাকাতির মাল উদ্ধারের অভিযোগ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের দলবদ্ধ ধর্ষণ ও সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, “ওই বাসের এক নারী যাত্রীকে ডাকাত দলের কয়েক সদস্য ধর্ষণ করেন। ডাক্তারি প্রতিবেদনেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আসামিদের নমুনা সিআইডির চিফ ডিএনএ অ্যানালিস্টের কাছে পাঠানো হয়। সংগৃহীত আলামতের সঙ্গে আসামি রাজা মিয়া, নুরুননবী হোসেন, আব্দুল মান্নান ও মাহমুদুল হাসান মুন্নার ডিএনএর মিল পাওয়া গেছে।”
ঘটনার দিন কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের বাসটি রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ-বনপাড়া রোড এলাকায় পৌঁছে। সেখানে আধঘণ্টা একটি রেস্তোরাঁয় খাবার বিরতি দেয়। পরে আবারও ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করলে পথে যাত্রী বেশে ডাকাত দলের সদস্যরা বাসটিতে ওঠে।
রাত দেড়টার দিকে বাসটি দেলদুয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছলে যাত্রীবেশী ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে চালককে সরিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে যাত্রীদের জিম্মি করে নগদ টাকা, মোবাইল টেলিফোন, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়।
এসময় এক নারী যাত্রীকে পেছনের সিটে নিয়ে কয়েকজন মিলে ধর্ষণও করে।