কুমিল্লাশুক্রবার, ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কুবির কেন্দ্রীয় মসজিদ যেনো নতুন যুগের নববী মডেল

প্রতিবেদক
Palash Khandakar
মে ১১, ২০২৫ ৩:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আকাশ আল মামুন, কুবি:

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে একটি প্রতীকী শক্তিতে, যেখানে মিশে যাচ্ছে আন্দোলনের জোয়ার, ধর্মীয় চেতনা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ। এক সময় এই মসজিদ ছিল শুধু নামাজ আদায়ের স্থান, আর এখন তা হয়ে উঠেছে ছাত্র আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র, শিক্ষার্থীদের সেবাকেন্দ্র এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঐক্যের জায়গা।

চব্বিশের ‘জুলাই বিপ্লব’ পরবর্তী সময় থেকে কুবির রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। বিশেষ করে ২০২৫ সালের ৯ মে, শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তাদের মুখে ছিল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের স্লোগান। এই মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ১৯ জুলাই, কারফিউয়ের দিনেও কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকেই শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধের আওয়াজ তোলে। এভাবে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এই মসজিদ হয়েছে প্রতিবাদের সূচনা বিন্দু।

ধর্মীয় চেতনা ও সচেতনতার ক্ষেত্র হিসেবে রুপ নিচ্ছে কুবি কেন্দ্রীয় মসজিদ। এ বছর রমজান মাসে কেন্দ্রীয় মসজিদে ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ শিরোনামে একটি সেমিনারের আয়োজন করে কোরআন ও কালচারাল স্টাডি ক্লাব। এতে অংশগ্রহণ করে শতাধিক শিক্ষার্থী, যেখানে আলোচনা হয় সময় ব্যবস্থাপনা, আত্মশুদ্ধি এবং সমাজে একজন মুসলমানের দায়িত্ব নিয়ে। এই আয়োজন ছিল ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি নেতৃত্ব গঠনেরও অনুশীলন।

গোলমহর রোডের পাশে অবস্থিত কেন্দ্রীয় মসজিদ যেনো পরিণত হয়েছে সেবার কেন্দ্রস্থলে। ২০২৫ সালের ১৯ ও ২৫ এপ্রিল, ভর্তি পরীক্ষার সময় কেন্দ্রীয় মসজিদকে ঘিরেই গড়ে তোলা হয় খাওয়া-দাওয়ার ও আবাসনের অস্থায়ী ব্যবস্থা। কোরআন ও কালচারাল স্টাডি ক্লাব, দাওয়াহ কমিউনিটি এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক দলগুলো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ায় আন্তরিকতা ও সহানুভূতির সঙ্গে। যেন এই মসজিদ হয়ে উঠেছে অতিথির অভিভাবক।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দিলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কুবির কেন্দ্রীয় মসজিদ যেন হয়ে উঠেছে সেই ঐতিহাসিক মসজিদে নববীর মতো। যেখান থেকে পরিচালিত হতো গোটা আরবের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় রূপান্তর। এখান থেকে যেমন শিক্ষার্থীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আওয়াজ তোলে, তেমনি এখান থেকেই বেরিয়ে আসে সেবার অঙ্গীকার।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘মসজিদে নববী যেমন ছিল রাসূল (সা.)-এর যুগে নেতৃত্ব, শিক্ষা ও জনসেবার কেন্দ্র, কুবির কেন্দ্রীয় মসজিদও আজ আমাদের কাছে সেই রকমই এক প্রেরণার উৎস। এখান থেকেই আমরা আত্মশুদ্ধি, ঐক্য ও পরিবর্তনের ভাষা শিখছি। এই মসজিদ আমাদের কেবল ধর্ম নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকেও পরিচালিত করছে।’

মসজিদের নিয়মিত মুসল্লিরা বলছেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এখন আর শুধুই নামাজের স্থান নয়; এটি আন্দোলন, আদর্শ, আত্মশুদ্ধি ও সহমর্মিতার মিলনমঞ্চ। এখানেই তৈরি হচ্ছে এক নতুন নেতৃত্ব, যাদের হাতে গড়ে উঠবে আগামীর বাংলাদেশ।’