কুমিল্লারবিবার, ৯ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

৯ বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামি গ্রেফতার

প্রতিবেদক
Palash Khandakar
মে ১, ২০২৪ ৩:৩৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার:

কুমিল্লা র‍্যাব-১১ এর বিশেষ অভিযানে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার কুমিল্লায় চাঞ্চল্যকর ৯ বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামি গ্রেফতার

১ মে বুধবার বেলা ১১টায় র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন র‌্যাব-১১ এর পরিচালক, অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা।

র‌্যাব-১১ এর পরিচালক, অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, গত ২৯ এপ্রিল ২০২৪ইং কুমিল্লার সদর দক্ষিণে ০৯ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণসহ নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটে। বর্ণিত ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ০১ টি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৪২, তারিখ-৩০/০৪/২০২৪। ধর্ষণসহ হত্যার ঘটনাটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। উক্ত ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র‍্যাব-১১ এর বিশেষ অভিযানে গত ৩০ এপ্রিল রাতে চাঁদপুর জেলার শাহরাপ্তি থানাধীন ফেরুয়া বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষক ও হত্যাকারী মফিজুল ইসলাম প্রকাশ মফু (৩৮), পিতা-মৃত আব্দুল খালেক, সাং-খিলপাড়া, থানা-সদর দক্ষিণ মডেল, জেলা-কুমিল্লা’কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী ধর্ষণসহ হত্যার ঘটনার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভিকটিমের পিতা সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী এবং তার মা একজন গৃহিনী। ভিকটিম সোনালী শিশু শিক্ষা বিদ্যা নিকেতন কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে অধ্যায়নরত ছিল। গ্রীষ্মের প্রখরতার দরুন ভিকটিমের স্কুল সকাল ০৭ ঘটিকা হতে ১০ ঘটিকা পর্যন্ত চলমান থাকতো এবং ঘটনার দিন সকালে সে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। কিন্তু ১১ঘটিকার দিকেও ভিকটিম বাড়ী না ফিরলে ভিকটিমের মা চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং কালক্ষেপন না করে তিনি তার মেয়ের স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। স্কুলে পৌছানোর পর স্কুল শিক্ষিকার শরনাপন্ন হয়ে মেয়ের বিষয়ে কোন হদিস না পেয়ে ভিকটিমের মা ভুল থেকে ফেরার পথে ভিকটিমের বেশ কয়েকজন সহপাঠির কাছে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন যে, ভিকটিম স্কুল শেষে বাড়ি চলে গিয়েছে। অতঃপর ভিকটিমের মা বাড়ি ফিরে আসেন এবং স্থানীয় লোকজন ও আশে পাশের প্রতিবেশীদের সহায়তায় সম্ভাব্য সকল স্থানে তার মেয়ের সন্ধান করেন। ইতিমধ্যে ভিকটিমের মা তার প্রবাসী স্বামীর সাথে আলোচনা করে আশেপাশের কয়েকজন লোকজন নিয়ে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী দায়ের করার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথিমধ্যে ১৫১৫ ঘটিকার সময় জনৈক ব্যক্তি ভিকটিমের মাকে ভিকটিমের লাশের বিষয়ে অবহিত করলে ভিকটিমের মা ও সাথে থাকা লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছান এবং ভিকটিমের মরদেহ দেখতে পান। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনৈক ব্যক্তি ভিকটিমের মা সহ অন্যান্য লোকজনদেরকে জানায় যে, সে আসামী মফিজুল ইসলাম প্রকাশ মফু (৩৮) কে ঘটনার দিন সকাল আনুমানিক ১১ ঘটিকার সময় ঘটনাস্থলের রাস্তার পাশে থাকা বাঁশঝাড়ের ভিতর থেকে দ্রুত রাস্তায় উঠে আসতে দেখেছেন।

তিনি আরও বলেন,গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, নিহত ভিকটিম গ্রেফতারকৃত আসামীর প্রতিবেশীর মেয়ে এবং পূর্ব পরিচিত। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গ্রেফতারকৃত আসামী মফিজুল তার অসৎ কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে গত ২৯ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ সকাল আনুমানিক ১০:৪৫ ঘটিকায় ঘটনাস্থলের পাশের রাস্তায় ভিকটিমের আসার অপেক্ষায় ওত পেতে থাকে। পথিমধ্যে ভিকটিম স্কুল থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌছালে গ্রেফতারকৃত আসামী ভিকটিমকে কৌশলে রাস্তার পাশের ধানী জমিতে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে ভিকটিম চিৎকার করার চেষ্টা করলে আসামী মফিজুল ভিকটিমের মুখ ও গলা চেপে ধরে। এতে ভিকটিম শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অতঃপর আসামী মফিজুল ভিকটিমের কোন নড়াচড়া দেখতে না পেয়ে ভিকটিমের কানে থাকা দুল ছিড়ে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের মা ও অন্যান্য লোকজন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে ভিকটিমের মৃতদেহ দেখতে পায় এবং পুলিশকে খবর দেয়। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে গ্রেফতারকৃত আসামী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে নিজ এলাকা হতে পালিয়ে চাঁদপুরে চলে যায় এবং সেখানে আত্মগোপন করে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী মাদকাসক্ত ও তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য গাঁজা সেবনের বিষয়েও তথ্য পাওয়া যায়।