স্টাফ রিপোর্টার:
কুমিল্লার মুরাদনগরে স্ত্রীর পরকীয়া সন্দেহের জেরে এক শিশু সন্তানকে গলাটিপে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বাবার বিরুদ্ধে। ২২ ফেব্রুয়ারি, শনিবার দুপুরে মুরাদনগর উপজেলা সদরের উত্তরপাড়া গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন ক্বারি আবু নাঈম ওরফে নাঈম হুজুর (৪৫)। তিনি মুরাদনগর উপজেলা সদরের উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে এবং ঢাকার একটি মসজিদে ইমামতি করেন। নিহত শিশু আব্দুল্লাহ ওরফে রাফসান (১৬ মাস) তার তৃতীয় সন্তান।
শিশু রাফসানের মা শাহিদা আক্তার জানান, রাফসানের জন্মের পর থেকেই তার বাবা তাকে নিজের সন্তান হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। এই বিষয়টি নিয়ে তাদের সংসারে দীর্ঘদিন ধরে অশান্তি চলছিল। শনিবার সকাল ৯টার দিকে শিশু রাফসানকে চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা জেলা শহরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তার বাবা নাঈম। তবে শিশুটির মা শাহিদা আক্তার তাদের সাথে যেতে চাইলে বাধা দেন নাঈম। এতে শাহিদা আক্তার খুবই অসন্তুষ্ট হন এবং নিজে যেতে না পেরে তার বড় ছেলে ১২ বছর বয়সী আনাসকে সফরসঙ্গী হিসেবে পাঠান। কিছুক্ষণ পর বড় ছেলে আনাস একা বাড়ি ফিরে আসে এবং জানায় যে তার বাবা তাকে মুরাদনগর সদরের বাজারে রেখে ছোট ভাই রাফসানকে নিয়ে একা কুমিল্লায় চলে গেছে।
বেলা ১২টার দিকে মৃত অবস্থায় রাফসানকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন তার বাবা নাঈম। তিনি দাবি করেন যে কুমিল্লা শহরে যাওয়ার পথে কংশনগর এলাকায় গাড়ির ভিতরে অসুস্থতার কারণে রাফসানের মৃত্যু হয়েছে। তবে মা শাহিদা আক্তারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তার স্বামী তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল যে সে রাফসানকে মেরে ফেলবে। তিনি দৃঢ়ভাবে দাবি করেন যে অসুস্থতার কারণে নয়, বরং তার স্বামীই শিশু রাফসানকে গলাটিপে হত্যা করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিশু রাফসানের জন্মের পর থেকেই স্ত্রীর পরকীয়া সন্দেহে নাঈম বহুবার সালিশি বৈঠক ডেকেছে। প্রতিটি সালিশেই সে শিশু রাফসানকে মেরে ফেলার হুমকি দিত। তবে সালিশে স্ত্রীর পরকীয়ার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় স্থানীয় মাতব্বরদের পরামর্শে তারা একসাথে সংসার চালিয়ে যাচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, স্ত্রীর পরকীয়া সন্দেহের জেরেই নাঈম শিশু রাফসানকে হত্যা করেছে।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় শিশুটির বাবা নাঈম মিয়াকে আটক করা হয়েছে। শিশু রাফসানের মরদেহ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।