কুমিল্লাবৃহস্পতিবার, ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সীমান্তের এপারে বাবার মরদেহ, পারলেন না দেখতে ওপারের সন্তানরা

প্রতিবেদক
Palash Khandakar
সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ ১২:১৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ডেস্ক রিপোর্ট:

বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন দফাদার। তবে তার দুই সন্তান বসবাস করেন ভারতে। শেষবারের মতো তাদের বাবার মুখ দেখাতে সীমান্তের এপারে কাঁটাতারের কাছে মরদেহ নিয়ে যান স্বজনরা। আর ওপারে অপেক্ষা করেন তার সন্তানরা। কিন্তু অপেক্ষা বাড়লেও বিএসএফ অনুমতি না দেওয়ায় আর বাবার দেখা পেলেন না তারা। দুই সন্তানকেই ফিরতে হয় বুকভরা কষ্ট নিয়ে।

ঘটনাটি বৃহস্পতিবার বিকেলে মেহেরপুরের মুজিবনগর স্বাধীনতা সড়ক সীমান্তের। বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন দফাদার মুজিবনগর উপজেলার ভবের পাড়ার বাসিন্দা। বুধবার বিকেলে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান। তার তিন সন্তান। এদের মধ্যে এক মেয়ে ও দুই ছেলে ভারতে বিয়ে করায় নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে বসবাস করে আসছেন।

দেশে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধার আরেক ছেলে মাইকেল দফাদার জানান, বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে ওপারে কাঁটাতারের কাছে অপেক্ষা করতে থাকেন আমার ভাইবোন ও অন্য স্বজনরা। বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে চিঠি দিলে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি না পাওয়ায় শেষবারের মত বাবার মুখ দেখতে পারলেন না তারা।

তিনি আরও জানায়, এর আগে বাবার জীবিত মুখটা দেখার জন্য বহু চেষ্টা করে দেখা হয়নি ভাইবোনের। মোবাইল ফোনে কথা বলেই শান্তি খুঁজতাম আমরা। মৃত্যুর পর বাবার মুখটা শেষবারের মতো দেখতে পেলে কিছুটা মনকে সান্ত্বনা দিতেন ওপারে থাকা স্বজনরা।

ভবেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জুবের হোসেন জানান, সীমান্ত গ্রামগুলোতে বসবাসকারীরা বলছেন এমন ঘটনা এ প্রথম। অনেকের আপনজন বাবা মায়ের মৃত্যুর খবর পেলেও সীমান্তের শূন্য রেখায় শেষ দেখার ব্যবস্থা করে দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এবার কাঁটাতারের কাছে গিয়েও আকুতি জানিয়ে চোখের জলে ফিরে এসেছে।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, সন্তানদের শেষ বারের মতো বাবার মরদেহ সীমান্তের শূন্যরেখায় দেখানোর জন্য বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। দুপুরে বিএসএফের পক্ষ থেকে জানায় অনুমতি না মেলায় দেখানো সম্ভব হচ্ছে না।

সাবেক ইউপি সদস্য দিলীপ মন্ডল জানান, এখানকার বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার ভারতের হৃদয়পুর বিএসএফের সঙ্গে সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন যোগাযোগের। ছেলে এবং মেয়েকে তার বাবার মরা মুখটা দেখানোর জন্য, কিন্তু সেটা হয়নি। তবে এর আগে এখানকার একটা মেয়ে মারা যায় সেটা দেখানো হয়েছিল।

বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। শেষবারের মতো বাবার মরদেহ দেখতে কান্নায় ভেঙে পড়েন কাঁটাতারের ওপারে থাকা সন্তানরা। পরিবারের সদস্যরা অনুরোধ করেন বিজিবিকে। ভারতের হৃদয়পুর বিএসএফের সঙ্গে সাধ্যমত চেষ্টা করেছে বিজিবি। কিন্তু অনুমতি না মেলায় ছেলে এবং মেয়েকে তার বাবার মরদেহ দেখানো যায়নি। এটা অমানবিক ঘটনা।