ডেস্ক রিপোর্ট:
সাবেক মন্ত্রী ও এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকী গতকাল শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতে আততায়ীদের গুলিতে মারা গেছেন। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ মুম্বাইয়ের খের নগরে নিজের ছেলের অফিসের সামনে তার ওপর গুলি চালায় তিন দুষ্কৃতকারী।
এ সময় লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান সালমান খান। প্রিয় মানুষের মৃত্যুতে বলিউড ভাইজান বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বি টাউনে বাবা সিদ্দিকীর সঙ্গে সালমান খানের সম্পর্কের গভীরতা সবারই জানা। তিনি সালমান ও শাহরুখ খানের দ্বন্দ্ব মেটানো রূপকার ছিলেন বাবা। একসময় এমন ছিল— যখন শাহরুখ-সালমান একে অন্যের ছায়া থেকেও দূরে থাকতেন।সেটি মিটমাট করেন বাবা।
বলিউডের দুই নায়কের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছিল ২০০৮ সালে। ক্যাটরিনা কাইফের জন্মদিনের একটি ঘটনা কেন্দ্র করে। সেই সময় বাবা সিদ্দিকীর ডাকেই তার ইফতার পার্টিতে গিয়েছিলেন শাহরুখ ও সালমান। সেখানেই তাদের দীর্ঘ সময়ের দ্বন্দ্ব মিটিয়েছিলেন তিনি। দুই খানকে আবারও বেঁধেছিলেন বন্ধুত্বের বাঁধনে। সেখানেই দুজনের অভিমানের বরফ গলে যায়। আলিঙ্গনে মিটে যায় যাবতীয় তিক্ততা।
আনন্দবাজার প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ইফতারে জমকালো পার্টি দিতেন এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকী। সেখানে দেখা মিলত বলিউডের বড় বড় তারকাদের। কলকাতা থেকে উড়ে যেতেন অভিনেত্রী ঋতাভরি চক্রবর্তী। এই পার্টিতেই বাবা সিদ্দিকী সালমান খানের সঙ্গে শাহরুখ খানের যে মনোমালিন্য চলছিল, তা মিটিয়ে দেন তিনি। তাই শতব্যস্ততার মাঝেও বাবা সিদ্দিকীর দেওয়া ইফতার পার্টিতে ছুটে যেতেন সালমান খান। বাবা সিদ্দিকীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি বিচলিত হবেন—এটাই স্বাভাবিক। সেই জায়গা থেকেই তিনি শোকের খবর শুনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন, রিয়্যালিটি শোর শুটিং মাঝপথে বন্ধ করে দেন।
বাবা সিদ্দিকী হত্যার দায় স্বীকার করেছে বিষ্ণোই গ্যাং। কিন্তু অভিযুক্তদের দাবি— তারা বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য। পুলিশ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় নাম জড়ানোর পর থেকেই এই বিষ্ণোই গ্যাংয়েরই হিটলিস্টে রয়েছেন সালমান। ফলে সুপারস্টারের জন্য অনুরাগীদের চিন্তা আরও বাড়ল।
জানা গেছে, এভাবে বাবা সিদ্দিকীর ওপর হামলার ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বলিউডে। কারণ রোববার সকালে সিদ্দিকী খুনে গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের যোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে মুম্বাই পুলিশ। যে দুজনকে ধরা হয়েছে, তারা স্বীকার করেছে যে, তারা বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য। লরেন্স বিষ্ণোই লাগাতার সালমানকে খুনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে তাই ভাইজানের পরিবারও অস্বস্তিতে। সালমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন নিহত নেতা বাবা সিদ্দিকী।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৪ এপ্রিল ভোরে বান্দ্রায় সালমান খানের গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায় দুই বন্দুকবাজ। মুম্বাই পুলিশের পেশ করা চার্জশিটে বলা হয়েছে— সালমান খানের বান্দ্রার বাড়ির বাইরে গুলি চালানোর কয়েক ঘণ্টা আগে ভিকি গুপ্তা ও সাগর পালের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছিলেন জেলবন্দি গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই।
সালমান বিগত সময়ে একাধিকবার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের সহযোগীদের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন। এবং যেখানে বলা হয়েছে যে, নিহত গায়ক সিধু মুসেওয়ালার মতো তারও একই পরিণতি হবে। সালমান যখন থেকে প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছিলেন, তখন থেকেই অভিনেতার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সুরক্ষার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন বাবা সিদ্দিকী।
এদিকে পাপারাজ্জিদের অ্যাকাউন্ট থেকে ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, হাসপাতালে পৌঁছানোর সময় শিল্পা শেঠি দৃশ্যত চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না। গাড়ির মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। এ সময় স্বামী রাজ কুন্দ্রাকেও দেখা যায়— এই কঠিন সময়ে স্ত্রীকে সঙ্গ দিতে।
গোটা ঘটনা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে রীতেশ দেশমুখ বলেন, ‘এ জঘন্য অপরাধের অপরাধীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে’।
বান্দ্রা পশ্চিমের তিনবারের বিধায়ক বাবা সিদ্দিকী কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অজিত পাওয়ারের এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানার দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তৃতীয় অভিযুক্ত পলাতক। পুলিশ সূত্রেই আরও জানা গেছে যে, বাবা সিদ্দিকীকে ১৫ দিন আগে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল, যার পরে তার নিরাপত্তা ওয়াই ক্যাটাগরিতে নিয়ে যাওয়া হয়।