কুমিল্লাশনিবার, ২১শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মানবসেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন ‘ বিবেক’

প্রতিবেদক
CUMILLA PRESS
আগস্ট ৫, ২০২১ ৬:২৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ১৮ মে মারা যান কুমিল্লার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা মাহবুবে এলাহী। তার স্ত্রী তখন চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করছিলেন।বাড়িতে ছিলেন অন্য স্বজনরা। কিন্তু করোনা নিয়ে শঙ্কা আর আতঙ্কে দাফন কাজে সাহস পাচ্ছিলেন না কেউ। ঘরেই পড়ে ছিল মরদেহ। খবর পেয়ে এগিয়ে আসলেন স্থানীয় ইউসুফ মোল্লা টিপু ও তার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিবেক’-এর সদস্যরা। সেই থেকে শুরু। এরপর থেমে থাকেনি বিবেক

এখন পর্যন্ত কুমিল্লা ও আশপাশের জেলাগুলোতে ৩৫৫টি মরদেহের দাফন এবং সৎকার করেছে সংগঠনটি। তবে শুধু মরদেহ দাফন ও সৎকারেই থেমে থাকেনি বিবেকের কার্যক্রম। ওই বছরের ৩০ মার্চ থেকে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজ শুরু করেন তারা। যুক্ত হয় অক্সিজেন এবং অ্যাম্বুলেন্স সেবা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন পর্যন্ত ৬ শতাধিক মানুষকে অক্সিজেন সেবা দিয়েছে বিবেক। ৫২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে তাদের। এছাড়া গরীব অসহায় রোগীদের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবার পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে কাফনের কাপড়সহ আনুষাঙ্গিক খরচ। করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৮ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে সংগঠনটি।

বিবেকের এসব মানবিক কাজের কথা ছড়িয়ে পড়ে কুমিল্লাসহ সারাদেশে। ফলে করোনাকালে কর্মতৎপর অন্য সংগঠনগুলোর কাছে দৃষ্টান্ত হতে শুরু করে সংগঠনটি। কুমিল্লা মহানগর ছাড়িয়ে সংগঠনটি ছড়িয়ে পড়ে নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকায়।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ইউসুফ মোল্লা টিপু বাংলানিউজকে বলেন, যখন দেখলাম বাবার মরদেহ সন্তান ফেলে রেখে চলে যাচ্ছে, ভয়ে এক ভাইয়ের মরদেহের পাশে যাচ্ছে না আরেক ভাই, তখন আর বসে থাকতে পারিনি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মাঠে নেমে পড়েছি।

তিনি জানান, প্রথমে ১১ জন সদস্য নিয়ে শুরু হয় সংগঠনের কার্যক্রম। মসজিদে বসে সিদ্ধান্ত হয় কাজে নেমে পড়ার। বর্তমানে সাইফুল ইসলাম রনি, মহিউদ্দিন হোসাইন, ফাহরিয়াল, পাভেল, রকি, সুজন, ওসামাসহ ৫২ জনের পরিবার বিবেক। মানুষের সংকটকালে ডাক পেলে ছুটে যান তারা। এখন পর্যন্ত ৩৫৫টি মরদেহের দাফন ও সৎকার করেছি। এরমধ্যে সাত জন হিন্দু ও একজন খ্রিস্টান ছিলেন।

তিনি আরও জানান, নিজস্ব তহবিল আর সংগঠনের সদস্যদের সহায়তায় কাজ চলছে বিবেকের। করোনা রোগীদের গোসল দিতে বর্তমানে সংগঠনটির রয়েছে নিজস্ব স্থান। সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের জায়গায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে তা নির্মাণ করা হয়।

সংগঠনের কার্যক্রমের ব্যাপারে কথা হয় করোনায় মারা যাওয়া দুই জনের স্বজনের সঙ্গে। আমিরুল ইসলাম রানা নামে সিটি করপোরেশন এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তার বোন তাসলিমা আক্তার রিতা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বিবেকের সদস্যরা তার বোনের দাফন, কাফন ও নামাজে জানাজার কাজে সহযোগিতা করে।

গোলাম মোস্তফা নামের আরেকজন জানান, তার মালিকানাধীন স্কুলের শিক্ষক মহানগরের শাসনগাছা এলাকার বাসিন্দা সিরাজুম মুনীরা। তিনি মারা গেলে বিবেকের সদস্যরা দাফন, কাফন ও নামাজে জানাজার ব্যবস্থা করেন।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কু বলেন, ইউসুফ মোল্লা টিপু ও তার সংগঠনের সদস্যরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কাজ রেখে মানবসেবায় যুক্ত হয়েছেন তারা। টিপু নিজেও তার পরিবারসহ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এ কাজ থেকে সরে যাননি।সমাজের সকলের উচিত এমন কর্মকাণ্ডে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।