কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় অন্যান্য রোগের তুলনায় চর্মরোগের প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। প্রতিদিনই এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক বন্যার পর এ রোগ যেন আরো বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাজুড়ে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যেন ‘প্রতিটি ঘরেই’ চর্মরোগের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকরা মনে করছেন, বন্যার দূষিত পানি, পরিবেশ দূষণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং ত্বকের সঠিক যত্নের অভাব এসবের জন্য দায়ী। বিশেষ করে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যায় তারা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। এ থেকে মুক্তির জন্য পারিবারিক সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সরেজমিনে দেখা গেছে, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে চর্মরোগী রোগীর সংখ্যা অন্যান্য রোগের তুলনায় অনেক বেশি। ফুসকুড়ি, তীব্র চুলকানি, খোসপাঁচড়া, স্কেবিস, হিট র্যাশসহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ নিয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। বিশেষ করে বন্যাপরবর্তী সময়ে এই রোগের প্রকোপ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, পরিবেশ দূষণ মানবদেহে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। দূষিত পানি, অপরিচ্ছন্ন পোশাক, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং ত্বকের সঠিক যত্নের অভাব এসব রোগের অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাবেও অ্যাকজিমা দেখা দেয়, যা শিশুদের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
তবে চর্মরোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী হওয়ায় অনেক রোগী রোগ সঠিকভাবে নিরাময়ের আগেই ওষুধ বন্ধ করে দেন, যা রোগকে আরো জটিল করে তোলে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এ ধরনের অবহেলা মারাত্মক হতে পারে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শঙ্খজিৎ সমাজপতি জানান, বেশিরভাগ রোগী প্রথমে ভুল চিকিৎসা নিয়ে রোগকে জটিল পর্যায়ে নিয়ে আসে। এতে চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী এবং ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। অনেক সময় রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন পড়ে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, পরিবেশ দূষণের কারণে বিভিন্ন রোগ, বিশেষ করে চর্মরোগের প্রকোপ বেড়েছে। ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবীসহ বিভিন্ন জীবাণুর কারণে মানুষ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বন্যার দূষিত পানি এ সমস্যাকে আরও বৃদ্ধি করেছে। তবে নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে বলে তিনি আশাবাদী।