রাজধানীর কলাবাগানে শিশু গৃহকর্মী হেনা মাঝে মাঝে গৃহকর্ত্রী সাথী পারভীন ডলির বাচ্চার খাবার খেয়ে ফেলতো। এজন্য তাকে নির্যাতন করে হেনাকে হত্যা করেন সাথী পারভীন ডলি। হত্যার পর মোবাইল ফোন রেখে নিজের বাচ্চা নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করতে থাকেন। পরে যশোরে চলে যান সাথী। শুক্রবার (৩১ আগস্ট) তাকে যশোর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফ হোসেন এ তথ্য জানায়।
তিনি জানায়, গত ২৬ আগস্ট সকালে কলাবাগানের ওই বাসার দরজা ভেঙে হেনার মরদেহ উদ্ধার করা। শিশুটি এতিম। ২০১৯ সাল থেকে সে সাথী পারভীন ডলির বাসায় কাজ করতো। সে ওই বাসায়ই থাকতো। তার শরীরে অনেক নতুন ও পুরোনো আঘাতের চিহ্ন, মুখে ফেনা, শরীর ফোলা দেখতে পাই।
বাসার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আমরা দেখতে পাই, শিশুটির গলায় পা দিয়ে গৃহকর্ত্রী হেনা নির্যাতন করছেন। সাথী ঘটনার পরপর তার বাচ্চা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান। বাসায় আমরা তিনটি মোবাইল ফোন পাই, যেগুলো সাথী ব্যবহার করতেন। তিনি সেগুলো বাসায় রেখে বের হন।
‘পরে কলাবাগান থানা পুলিশসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট এটা নিয়ে কাজ শুরু করে। ঘটনার চারদিনের মাথায় আমরা আসামিকে গ্রেফতার করি। কলাবাগান থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থানের ৪০০ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। কারণ আসামি তার মোবাইল ফোন রেখে যান, ফলে গতানুগতিক ধারায় আমাদের তদন্ত করতে হয়েছে। ফুটেজে তাকে বিভিন্ন স্থানে পথচারী হিসেবে ঘুরতে দেখা যায়। কখনো মুদির দোকানে বা বিভিন্ন মানুষের ফোন থেকে তার আত্মীয়স্বজনকে ফোন করেন। তিনি পালিয়ে থাকার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমরা সংবাদ পাই তিনি যশোরে আছেন। পরে কলাবাগান থানা পুলিশ সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে।’ বলেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, দা, বটি দিয়ে তিনি শিশুটিকে নির্যাতন করতেন। কখনো লাঠি দিয়ে নির্যাতন করেছেন। হেনার অপরাধ হলো তার বাচ্চার জন্য রাখা খাবার খেয়ে ফেলতো। তার বাচ্চার খেলার সাথী হিসেবে একজন আরেকজনকে মারতো- এমন ছোটখাটো বিষয়ে এই হত্যাকারী তাকে নির্যাতন করেন। এই নির্যাতনের ফলে বাচ্চাটি মৃত্যুবরণ করে। বাচ্চাটি বিছানায় মলত্যাগ পর্যন্ত করে ফেলে।
বাচ্চার খাবার খেয়ে ফেলায় গৃহকর্মী হেনাকে হত্যা করেন ডলি
গৃহকর্মীদের যেন এভাবে নির্যাতন না করা হয় সেই অনুরোধ জানান তিনি। এ ধরনের অপরাধ করে কেউ পার পায় না বলেও উল্লেখ করেন এই উপ-পুলিশ কমিশনার।
নির্যাতনের কারণ বিষয়ে এক প্রশ্নের বিষয়ে তিনি জানান, বাচ্চাটির ওপর নির্যাতনের কারণ একটাই সে তার নিজের বাচ্চার খাবার খেয়ে ফেলতো। এটাই তার অপরাধ। এ কারণে মেরে ফেলাটা যে যৌক্তিক হয়নি আসামি নিজেই এখন স্বীকার করছেন।
আসামির বিষয়ে তিনি জানায়, তিনি এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের একজন সার্ভেয়ার। তবে ২০০৩ সালে তিনি প্রথমে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগ দেন। পরে ডিপ্লোমা করে ২০১১ সালে সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি পান। ২০১৬ সালে বিএসসি করে নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার রাজনৈতিক পরিচয় আমরা বিবেচনায় আনতে চাই না। আমরা তাকে শুধু একজন আসামি হিসেবেই দেখছি।
তিনি বলেন, তার দ্বিতীয় স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চিকিৎসক ছিলেন। ২০২০ সালে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়। আর তার প্রথম স্বামী ছিলেন একজন ড্রাইভার। এলজিইডিতে চাকরি করা অবস্থায় তার সঙ্গে বিয়ে হয়। পরে সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি হলে তাকে ডিভোর্স দেন। ১২ বছর তার স্বামী ছিল না। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এসময় তাদের দুটি জমজ বাচ্চার জন্ম হয়। একটি বাচ্চা মারা যায়, আরেকটি বাচ্চা জীবিত রয়েছে। সেই বাচ্চাকে লালন-পালন করার জন্যই হেনাকে আনা হয়।