ডেস্ক রিপোর্ট:
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, বাংলাদেশের ৫৩ বছরে কখনো এমন রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের ব্যাপারে; তিনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি, যার জ্ঞান, পাণ্ডিত্য এবং অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে চার মাসে তা কিছুটা হোঁচট খেয়েছে। তবে আমরা হতাশ হতে চাই না, আমরা আশাহীন হতে চাই না, বরং আশা রাখতে চাই তার সরকারের ওপর। যেহেতু আমরা সবাই এই সরকারকে সমর্থন দিয়েছি, আমরা বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশের ৫৩ বছরে এমন ঐকমত্য কখনো হয়নি, যা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে তৈরি হয়েছে।
সোমবার সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
ভিপি নুর বলেন, এবারের বিজয় দিবসটি অত্যন্ত আনন্দঘন এবং উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করছি। কারণ আমরা দেখেছি, গত দেড় দশকে যে কর্তৃত্ববাদী শাসন আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল এক ভীষণ কঠিন সময়। শহিদ মিনারে কিংবা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা অনেক রাজনৈতিক নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, সম্মানিত ব্যক্তিদের লাঞ্ছিত এবং অপমানিত হতে হয়েছে।
ভিপি নূর বলেন, এবারের বিজয় দিবসটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, কারণ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য ছিল—একটি বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণ—২০২৪ সালেও তরুণ প্রজন্মকে সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হচ্ছে। এটি স্পষ্ট যে, গত ৫৩ বছরে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়নি। যার কারণে বাংলাদেশের নাগরিকরা এখন রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য জোরালো দাবি তুলছেন, যাতে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায়।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, আমরা আশা করি তারা জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার করবে এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাবে।
নুর বলেন, চার মাসে একটি সরকারকে মূল্যায়ন করার জন্য যথেষ্ট সময় নয়, বিশেষত বাংলাদেশের এই ধরনের পরিস্থিতি যেটা গত ৫৩ বছরে কখনো হয়নি। যেখানে এক সরকার পরিবর্তনের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চতর কর্তৃপক্ষসহ মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জেম পর্যন্ত পালিয়ে যায়, এমনকি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিবও পালিয়ে গেছেন। রাষ্ট্রকে এমন ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পর সঠিকভাবে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশে রাজনীতি করবে বা থাকবে, তাদের অবশ্যই ৭১-এর চেতনা মেনে এবং ৭১-এর মূল্যবোধকে সম্মান করে থাকতে হবে। আমরা আমাদের অস্তিত্বের জায়গায় কোনোভাবেই সমঝোতা করব না। আমি মনে করি, ৫৩ বছরেও দেশে এখনো ৭১-এর পরাজিত শক্তির তৎপরতা রয়েছে, বিশেষ করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিপক্ষের শক্তি হিসেবে নানা ধরনের ট্যাগ দেওয়া হত। কিন্তু আমি মনে করি, ৫৩ বছর পর আর স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বলে কিছু নেই; বাংলাদেশে সবাই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।