ডেস্ক রিপোর্ট:
গোমতী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গত কয়েকদিনে টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হুঁ হুঁ করে বাড়তে থাকে নদীর পানি। এতে বেড়িবাঁধে বসবাসকারীদের মাঝে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। বন্যার আশঙ্কায় অনেকেই বাঁধের ওপর বাঁশ-পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে স্থায়ী বসতি ছেড়েছেন।
বয়স্ক ও শিশুদের পাঠিছেন স্বজনদের বাসা-বাড়িতে। তবে স্বস্তির খবর হলো শুক্রবার (১১ জুলাই) সকাল থেকে বৃষ্টি বন্ধ থাকায় দ্রুত পানি কমতে শুরু করেছে। এতে নদী পাড়ের মানুষের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে।
এদিক পাহাড়ি ঢলে চলতি মৌসুমে গোমতী নদীর চরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় সবজি, আউশ ও রোপা আমন বীজ তলাসহ প্রায় ১৩ হাজার ৬৪০ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এতে প্রায় ১০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি বিভাগ।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন গোমতী নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার আশঙ্কায় নদীর বেড়িবাঁধের ওপর বাঁশ আর ত্রিপল দিয়ে বানানো ঝুপড়ি ঘর ছেড়ে মানুষ স্থায়ী বসতিতে ফিরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে যারা স্বজনদের বাসা-বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তারাও ফিরছেন নিজ নীড়ে। এই যেন এক শান্তির বার্তা। মুহুর্তেই মুছে গেল নদী পাড়ের মানুষের ক্লান্তি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে টানা মাঝারি ও ভারি বর্ষণ এবং ভারতের পাহাড়ি ঢলে গোমতীর পানি টইটুম্বুর হয়ে যায়। এতে নদীর চরে গড়ে ওঠা বসত ঘরের কাছাকাছি চলে আসে পানি। ফলে অনেকেই আগাম সতর্কতা হিসেবে বাড়ি ঘর ছেড়ে বেড়িবাঁধে সড়কের পাশে ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করেছে। কেউ আবার স্বজনদের বাসা-বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
বাড়ির মালামাল রক্ষা করতে বেড়িবাঁধে এনে রাখেছেন। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে নদীর পানি কমতে থাকায় সকাল থেকে মানুষ পূনরায় ঝুপড়ি ঘর ছেড়ে নিজ বাড়িতে ফিরতে থাকেন।
সংরাইশ এলাকার আবুল কামাল নামে এক বাসিন্দা জানান, নিরুপায় হয়ে গোমতীর চরে বসবাস করছি। নদীর পানি বাড়লে আমাদের হার্টবিটও বাড়তে থাকে। গত তিন দিনে মনে হয়েছে ৩ বছর পার করেছি। ঘরের কাছাকাছি পানি চলে এসেছে। ছেলে সন্তান নিয়ে বাঁশ-পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি বানিয়ে সড়কের পাশে রাত্রি যাপন করেছি। সকাল থেকে আকাশে রোদ দেখে এবং নদীর পানি কমায় এখন বাড়িতে চলে যাচ্ছি।
আমতলী এলাকার কৃষক শাহ আলম বলেন, চরে প্রায় তিন একর জমিতে এবার সবজি চাষ করেছি। ফলনও ভাল হয়েছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও ভারতীয় পানিতে সব তলিয়ে গেছে। ঋণ নিয়ে কৃষি কাজ শুরু করি। পানির কারণে আমার অন্তত ৮-১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঋণ পরিশোধ করব কিভাবে জানি না। এই চরে আমার মতো আরো অনেক কৃষক রয়েছে, তাদেরও লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, টানা ভারি বর্ষণ আর উজানের ঢলে গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। বৃষ্টি থামার পর এবং উজানের ঢল কিছুটা কমায় বিপদ মুক্ত বলা যেতে পারে। সর্বশেষ শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে গোমতী নদীর পানি ৮ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার পানির উচ্চতা ছিল ৯ দশমিক ৬৮ মিটার। গোমতী নদীর বিপৎসীমা ১১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার। আশা করছি বৃষ্টি না হলে রাতে পানি আরো কমে যাবে।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তানভীর হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তবু সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। এ ছাড়া দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবেদ আলী বলেন, এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও বন্যার সৃষ্টি হয়নি। একাধিক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি খবর পেয়েছি। আশার কথা হলো গোমতী নদীর পানি ধীরগতিতে হলেও কমে আসছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, চলতি মৌসুমে গোমতী নদীর চরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় সবজি, আউশ ও রোপা আমন বীজ তলাসহ প্রায় ১৩ হাজার ৬৪০ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। পুরোপুরি পানি নেমে গেলে আমরা এর সঠিক পরিসংখ্যান বের করতে পারব। বর্তমানে সব উপজেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকতারা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ আগস্ট রাতে জেলার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াসহ কয়েকটি উপজেলা। স্মরণকালের সেই বন্যার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন কুমিল্লার মানুষ। যার কারণে গোমতীতে পানি বাড়লে কুমিল্লা বাসীর মনে আতঙ্ক বাড়ে।