ডেস্ক রিপোর্ট:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাঁচ দিনের এশিয়া সফরের প্রথম ধাপে আগামীকাল রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে মালয়েশিয়ায় আসবেন। এই সফরেই প্রথমবার তিনি এশিয়ার এমন অঞ্চলে আসছেন, যা তার প্রশাসনের আরোপিত বাণিজ্যিক শুল্কের চাপে টালমাটাল অবস্থায় আছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুয়ালালামপুরে আজ শনিবার (২৫ অক্টোবর) শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শীর্ষ অর্থনৈতিক কর্মকর্তাদের বৈঠক। আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য, বাণিজ্যিক টানাপড়েন নিরসনের পথ খুঁজে বের করা।
ট্রাম্প সম্প্রতি চীনা পণ্যে নতুন করে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, অন্যদিকে বেইজিং বিরল খনিজ ও চুম্বক রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
এই আলোচনার মাধ্যমে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনে ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যকার উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পথ তৈরি হবে। ওই বৈঠকে শুল্ক, প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ ও মার্কিন সয়াবিন কেনা নিয়ে সমঝোতার সম্ভাবনা রয়েছে।
ওয়াশিংটন ত্যাগের আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে আমাদের ভালো একটি বৈঠক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আমাদের অনেক কথা বলার আছে, তারও অনেক কিছু বলার আছে।’
আগামী বৃহস্পতিবার বুসানে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হবেন ট্রাম্প ও শি জিনপিং। ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, যদি চীনের সঙ্গে চুক্তি না হয়, তাহলে ১ নভেম্বর থেকে চীনা পণ্যে মোট ১৫৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। এতে বেইজিং পাল্টা ব্যবস্থা নিলে দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান ‘বাণিজ্যিক যুদ্ধবিরতি’ ভেঙে যেতে পারে।
বাণিজ্যের পাশাপাশি দুই নেতার আলোচনায় আসতে পারে তাইওয়ান ও রাশিয়া ইস্যু। এই দুই বিষয়েই চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
ট্রাম্প আরো জানান, তিনি হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী পত্রিকা অ্যাপল ডেইলি-এর প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাই-এর মুক্তির বিষয়টি তুলবেন। বর্তমানে বেইজিংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইনে লাই কারাবন্দি আছেন।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা আমার তালিকায় আছে।
আমি এটা তুলব… দেখা যাক কী হয়।’
এদিকে ট্রাম্পের সফর ঘিরে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করছে। তারা ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগচাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে আসিয়ান সম্মেলন এড়িয়ে যাওয়ার পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্প যোগ দিচ্ছেন এই আঞ্চলিক বৈঠকে। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।
রবিবার ট্রাম্পের সঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আনোয়ার থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সংঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এই বৈঠকে দুই নেতা একটি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
ট্রাম্প এর আগে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, যদি দুই দেশ যুদ্ধ না থামায় তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করবে।
এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়ার নেতাকে বলেছিলাম, তিনি খুব ভালো মানুষ।’
এদিকে রবিবারই ট্রাম্পের ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে ট্রাম্পের। লুলা চান, যুক্তরাষ্ট্র যেন ব্রাজিলীয় পণ্যে আরোপিত ৪০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করে।
অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। লুলা শুক্রবার বলেন, দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান ‘অগ্রহণযোগ্য’, এবং তিনি বিষয়টি ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় সরাসরি তুলবেন।
এরপর ট্রাম্প সোমবার টোকিও পৌঁছাবেন। মঙ্গলবার তিনি জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ সপ্তাহেই দায়িত্ব নেওয়া তাকাইচি একজন রক্ষণশীল রাজনীতিক।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর ট্রাম্প যে কঠোর শুল্ক আরোপ করেছেন, তার বড় ধাক্কা থেকে জাপান অনেকটাই রেহাই পেয়েছে।
ট্রাম্পের অভিযোগ, ‘অন্যায় বাণিজ্য ভারসাম্য’ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘লুটে নিচ্ছে।’
তবে ট্রাম্পের এশিয়া সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া।
তিনি বুধবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী বুসানে পৌঁছাবেন। সেখানে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে তার উপস্থিতিকে ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এছাড়া এপেক সম্মেলনের ফাঁকে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন এবং গিয়ংজু শহরে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধানদের সঙ্গে নৈশভোজ করবেন।












