‘আপনার রিমান্ডের আসামির অবস্থা তো খুবই খারাপ। গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেছে থানাহাজতে’। একথা শুনে তড়িঘড়ি করে কোনোমতে মুখে পানি দিয়ে প্রায় দৌড়ে বাসা থেকে থানা ছুটে আসি। এরমধ্যে আরেক পুলিশ সদস্য জানায়, ‘স্যার, আপনার আসামি তো মনে হয় মারা গেছে’। ঘাবড়ে যাই। দৌড়ে আসি থানায়। দেখি আসামিকে থানাহাজত থেকে বের করে মেঝেতে শোয়ানো হয়েছে। তাকে অনেকবার ডাকলেও কোনো সাড়াশব্দ নেই। ভয় পেয়ে গেলাম। দ্রুত পার্শ্ববর্তী একটি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাই।
বিভিন্ন বিভাগের তিন চিকিৎসক জরুরি বিভাগে আসেন। আসামির বুকের ইসিজিসহ বিভিন্নভাবে তাকে পর্যাবেক্ষণ করেন। পরে চিকিৎসকরা আশস্ত করেন, তার কিছুই হয়নি। পরে হাফ ছেড়ে বাঁচি।
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহিন আহমেদ নয়ন। আদালতে জবানবন্দি না দিতে এক আসামি এভাবেই অসুস্থতার ভান করেছিলেন বলে জানান তিনি। ওই আসামির নাম রাসেল বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এসআই শাহিন আহমেদ নয়ন জানান, ‘আশুলিয়ার কাঠগড়ায় একটি পোশাক কারখানার মেশিন বিক্রির প্রতারণার মামলায় তিনদিনের রিমান্ডে আসেন আসামি রাসেলসহ তিনজন। ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা ছিল। বুধবার (৩০ আগস্ট) সকাল ৭টার দিকে রওয়ানা হওয়ার কথা। কিন্তু ৭টা বাজার কিছুক্ষণ আগে সে (আসামি) নিজের অসুস্থতার কথা বলে অচেতন হয়ে পড়ে ও মুখ দিয়ে লালা বের হতে থাকে। পরে চিকিৎসকদের কথায় বুঝলাম, এটা ছিল তার অভিনয়। যাতে আদালতে জবানবন্দি দিতে না হয়।
আসামির বরাত দিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানায়, ‘রাসেল নিজেও পরে স্বীকার করেছে অসুস্থ ভান ধরেছিল যাতে রিমান্ডে কোনো চাপ সৃষ্টি না করা হয় ও আদালতে যেতে না হয়। পরে তাকে বোঝানো হলে সেও নিজ ইচ্ছায় আদালতে জবানবন্দি দেয়।’
আসামি রাসেলের গ্রামের বাড়ির বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর মিরপুরে পরিবারসহ বসবাস করেন।
এ বিষয়ে আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও রেজিস্ট্রার ডা. রতন গীর কবির জানায়, বুধবার সকালে আশুলিয়া থানা থেকে পুলিশ রাসেল নামের একজন রোগীকে নিয়ে আসে। তার বুকে ব্যথা ও বমির কথা জানানো হয়। তবে আমরা বুকের ইসিজিসহ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। সব নরমাল ছিল। রোগীর তেমন কোনো সমস্যা আমরা পাইনি। পরে ছাড়পত্র দিয়ে দেই।